সেদিন শাশুড়ির কাছে আমার ননদ তরীকে দেখলাম অনলাইনে দেখা এক তসর শাড়ির জন্য বায়না করছে। আমি তখন বাসন মাজতে ছিলাম।
মেয়েটা বলছে এই পুজোতে তার ওই শাড়িটাই লাগবে। আমি বাসন মাজা শেষ করে রুমে চলে আসলাম টেবিল গুছিয়ে রাখতে। এ বাড়িতে আমার প্রথম পুজো তবুও
নেই কোনো আমেজ কারণ দেশের অবস্থা ভালো না। কখন কোথা থেকে কোন খারাপ খবর আসে আতংকে থাকি। অভ্রর ব্যবসাটা ইদানীং ভালো যাচ্ছে না। ভালোবেসে বিয়ে করেছি অভ্রকে তাই তার উপর আমার কোনো অভিযোগ নেই বরং দুঃসময়ে একসাথে থাকতে পারছি এটাই অনেক।
ছেলেটা পরিবারের সকলের খেয়াল রাখে যেভাবে ঠিক সেভাবে আমাকেও আগলে রাখে। পুজোর শপিং করার কোনো চিন্তা আমার নেই কারণ বিয়েতে এত এত শাড়ি পেয়েছি যে বছর দুয়েক নতুন শাড়ি না কিনলেও চলবে।
দেখতে দেখতে পুজোর তিনদিন বাকি। অভ্র একজন একজন করে পরিবারের সকলের জন্য নতুন পোষাক কেনা শুরু করে দিয়েছে। আমি সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছি আমার জন্য কিছু কিনবে না কিন্তু সে নারাজ পরে বলেছি যে আগে সবারটা হোক তারপর তোমার আর আমারটা।
সন্ধ্যায় দেখলাম আমার শ্বশুর তরীর জন্য তার পছন্দের সেই শাড়িটা কুরিয়ার থেকে আনলো।মনে মনে একটু খারাপই লাগলো যে বাড়িতে তো আমরা দুটো মাত্রই মেয়ে অথচ আমাকে একবার জিজ্ঞেস ও করলো না।কিন্তু আমার বাড়িতে দেখতাম বৌমণি আর আমি একসাথে সবটা পেতাম।
তরী দৌড়ে এসে আমাকে তার শাড়িটা খুশি মনে দেখাচ্ছে। কি সুন্দর শাড়িটা! আমারও ভালো লেগে গেলো।তরী আমাকে বলছিলো যে তার দাদা তাকে আরো ২টা ড্রেস কিনে দিবে বলেছে। পরেরদিন সকালে স্নান সেরে রুমে এসে দেখি বিছানার উপর রাখা একটা প্যাকেট। আমি ভাবলাম অভ্র হয়তো আমার জন্য কোনো সারপ্রাইজ রেখে গেছে বাইরে যাওয়ার আগে। ভাবলাম এ কি পাগলামো করে ছেলেটা।প্যাকেট খুলে আমার চক্ষু ছানাবড়া।আসলে আমি দেখলাম তরীর জন্য আনা সেইম তসর শাড়িটাই এখানে।আর সাথে ছোট্ট চিরকুট পিহুক তুমি আর তরী দুজনেই আমার মেয়ে।
আমি খেয়াল করে দেখেছি তোমাদের পছন্দ ও মিলে যায় তাই তোমাকে না জানিয়ে তরীর পছন্দ করা শাড়িই দুটো অর্ডার করিয়েছিলাম তরীকে দিয়ে। পছন্দ হোক আর না হোক অষ্টমীর সকালে আমি দুই মেয়েকে এক শাড়িতে দেখতে চাই। তোমার মামণি। চোখের কোণে জলের আভাস পাচ্ছি।কোথাও গিয়ে নিজেকে এতটা ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে যে কি বলবো। শাশুড়িকে মামণি বলে ডাকি আমি। বিয়ের পর তারা কখনো আমার কোনো অযত্ন করেনি।কিন্তু তবুও মনে ভেতর একটা আফসোসের তৈরি হয়েছিলো কিন্তু আজ তা আবারো মিটে গেলো। মামণির রুমের সামনে গিয়ে দেখলাম আলমারী গুছাচ্ছে আমি পা ছুঁয়ে প্রনাম করতে গেলে বুকে জড়িয়ে নিলো।মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিলো না। “আসলে সবাই শাশুড়ী হয় কিন্তু মা হয়ে উঠার গল্প খুব কম”।