আবারো বন্যার হানা! দিন দিন সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সিলেট সদর, গোলাপগঞ্জের রুস্তমপুর, জালালনগর, নলুয়া, কান্দিগাও, খালোপার, মজিদপুর, বাঘার
এখলাছপুর সহ অত্র এলাকায় দেখা দিয়েছে ফের বন্যা। ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে জেলার নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে নদীর তীর উপচে নতুন করে বিভিন্ন বাড়িঘরে পানি ঢুকছে।
এমন অবস্থায় বন্যাকবলিত পরিববারগুলো দীর্ঘস্থায়ী দুর্ভোগের আশঙ্কা করছে। বন্যাকবলিত মানুষেরা জানিয়েছেন, দ্বিতীয় দফায় আবার বন্যাকবলিত হওয়ায় অনেকেই চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। অধিকাংশ এলাকায় বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ছে।
রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় অনেকে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামের সংযোগসড়ক দুদিন ধরে পানিতে তলিয়ে আছে।
এসব রাস্তা দিয়ে যানবাহনের বদলে মানুষজন নৌকায় চলাচল করছেন। নগর ও পাঁচটি উপজেলায় অন্তত চার থেকে সাড়ে চার লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন বলে বানভাসিরা জানিয়েছেন। এরমধ্যে চরম দূর্ভোগ ও সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েছেন সদর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দারা।
এসব এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি। তাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও সেখানে তারা পৌঁছাতে পারছেন না। আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা নিরাপদ স্থানে যেতে এসব এলাকার বাসিন্দারা আর্তনাদ জানাচ্ছেন। এছাড়াও খাবার ও বিশুদ্ধ পানির জন্য চলছে হাহাকার।
রাস্তাঘাট পানিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে যাওয়ায় লাখো বানভাসী মানুষকে উদ্ধারের জন্য সেখানে পৌঁছাতে পারছেন না কেউ। এছাড়াও এসব গ্রামীন এলাকায় পৌঁছাতে নৌকা মিলছে না। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) রাত সাড়ে এগারোটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবস্থা আরও ভয়াবহের দিকে যাচ্ছিল বলে খবর পাওয়া গেছে।
এতে বন্যা আক্রান্ত এলাকার বাসা-বাড়ির পানির রিজার্ভার ট্যাংক বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যা কবলিতদের জন্য নগরীতে ৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে সিটি করপোরেশন। তবে এসব বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট ও সিলেট পয়েন্টে যথাক্রমে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া আমলসীদ, শেওলা ও শেরপুর পয়েন্টেও পানি বৃদ্ধি পাওয়া অব্যাহত রয়েছে। সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া লোভা ও ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত রয়েছে। সারি ও পিয়াইন নদীর পানি বেড়ে জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে।
পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। দ্বিতীয় দফা বন্যায় দিনমজুর ও খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষের ঘরে ঘরে চলছে হাহাকার। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার সবকিছু তলিয়ে গেছে পানিতে। উপজেলার সকল সড়ক ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে গোয়াইনঘাট। বিভিন্ন স্থানে বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পড়েছে।
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির জন্য মানুষের খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে।মানুষ ত্রাণের জন্য আকুতি জানাচ্ছে। এ নিয়ে অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পোস্টও দিয়েছেন সাহায্য পাওয়ার জন্য। অনেকে বলেছেন,৷ আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন পুরো সিলেট বন্যার পানিয়ে তলিয়ে যাচ্ছে… সবাই মসজিদে মসজিদ আল্লাহর কাছে আমাদের রক্ষা করার জন্য দোয়া করুন। সিলেটবাসী এই মুহুর্তে চ’রম বি’পদে আছে। যারা পারেন সকলে মিলে এগিয়ে আসুন বানভাসী মানুষদের সাহায্য করার জন্য। ইয়া আল্লাহ তুমি রহম করো । আমীন।