উজানের ঢল আর ভারী বৃষ্টিপাতে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি এখনো বাড়ছে।
ফলে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্রতি মুহুর্তে পানি বাড়ার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।
কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলার দেড় শতাধিক চর ও নদী সংলগ্ন গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। শনিবার (১৮ জুন) সকালে সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার
২২ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নিম্নাঞ্চল ও নদ-নদীর অববাহিকায় বসবাসকারী চরাঞ্চলের মানুষজন।
অনেক পরিবার নৌকা ও বাঁশের মাচানে আশ্রয় নিয়ে দিন পার করছে। বসত বাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়া দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পনির সংকট। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এসব চরাঞ্চলের অনেকেই তাদের গবাদি পশু নিয়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রেখেছে শিক্ষা বিভাগ।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চর গ্রামের চান মিয়া জানান, ঘরের ভেতরে বুক পর্যন্ত পানি উঠেছে। পার্শ্ববর্তী উঁচু জায়গা না থাকায় নৌকায় অবস্থান করছি। চুলা জ্বালাতে পারছি না। খুব কষ্টে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন পার করছি।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চরের হাসান আলী জানান, কোনো রকমে ঘরের মাচান উঁচু করে বউ-বাচ্চা নিয়ে আছি। যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আর ঘরে থাকারও উপায় থাকবে না। রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর আকন্দপাড়ার কৃষক জুয়েল মিয়া বলেন,
পরিবারের লোকজনের পাশাপাশি বাড়িতে থাকা গবাদি পশুরও খাদ্য সংকটে পড়েছি। বন্যার পানিতে জমিতে স্তূপ করে রাখা খড় ভেসে গেছে। আশপাশের জমি পানিতে ডুবে যাওয়ায় গবাদিপশুর জন্য ঘাস সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এমন দুর্গতি চললেও কোনও সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেন এই কৃষক।
জুয়েল মিয়া বলেন, ‘খড় শুকায় জমিতে রাখছি। ঢলে সব ভাইসা গেছে। ঘাসও নাই। অবলা পশু (গরু) গুলারে নিয়া বিপাকে পড়ছি।’ এলাকায় পানিবন্দি থাকা প্রায় ঘরে একই অবস্থা বলে জানান এই কৃষক। অন্যদিকে, নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে দুধকুমার নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার ভেঙে প্লাবিত হয়ে পড়েছে কয়েকটি গ্রাম।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন জানান, ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে জেলার সবকটি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।